Menu Close

জিড্ডু কৃষ্ণমূর্তি সম্পর্কিত

বিংশ শতাব্দীর বৃহত্তর অংশ জুড়ে জিড্ডু  কৃষ্ণমূর্তির (১৪৯৫ – ১৯৮৬), জীবন ও  শিক্ষা ব্যাপ্ত থেকেছে। বহু মানুষ মনে করেন তিনি মানবচেতনার মধ্যে একটা সুগভীর প্রভাব ফেলেছেন, সংগঠিত ধর্ম ছেড়ে বেরিয়ে এসে তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন যে, প্রভাবিত মনের ধ্বংসাত্মক সীমাবদ্ধতা থেকে মানবজাতিকে চূড়ান্ত ও নিঃশর্তভাবে যুক্ত করাই হল তাঁর জীবনের ব্রত।

তিনি ৯০ বছর বয়স অবধি পৃথিবীর নানা জায়গায় ভ্রমণ করেছেন এবং অনেকের সাথে কথা বলেছেন, নানা বিষয়ের উপর লিখেছেন এবং আলোচনা করেছেন। আমাদের প্রত্যেকের দৈনন্দিন জীবনের সূক্ষ্ম সমস্যাগুলি ছিল তাঁর আলোচ্য বিষয়। মানুষের আধুনিক সমাজে বসবাস করার সমস্যা, তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব সুরক্ষা সন্ধান, তাদের ভিতরকার হিংস্রতা, ভয় ও দুঃখের  ভার  থেকে নিজেদের মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি আলোচনা করেছেন। তিনি মানুষের জীবনের সাথে প্রাত্যহিক ভাবে জড়িত বিষয়গুলির উপর অনেক কথা বলেছেন।

তাঁর কোন স্থায়ী বাড়ী ছিলনা কিন্তু তিনি যখন কোথাও বেরতেন না তখন তিনি প্রায়ই ভারতের চেন্নাইতে অথবা ইংল্যান্ডের ব্রকউড পার্ক, ওহাই,ক্যালিফরনিয়ায় থাকতেন।

তিনি ভাষণ দেবার সময় শ্রোতাদের প্রত্যেককে আত্মজ্ঞানের মধ্য দিয়ে নিজেদের পাল্টে ফেলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতেন। এর জন্য দরকার হল তাদের যার যার দৈনন্দিন জীবনের সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনা ও অনুভবগুলি সম্পর্কে সজাগ থাকা। কীভাবে সম্পর্কের দর্পণের মধ্য দিয়ে মনোজগতের এই চলমানতা পর্যবেক্ষণ করা যায় সেই বিষয়ে সচেতন থাকা।

কৃষ্ণমূর্তি অন্ধ্রপ্রদেশের একটি ছোট শহর মদনাপল্লীতে এক ধার্মিক মাতা পিতার অষ্টম সন্তান হিসাবে ১১ই মে ১৮৯৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর যখন ১৪ বছর বয়স তখন থিওসফিকাল সোসাইটির সভাপতি এনি বেসান্ত তাঁকে দত্তক নেন,লালনপালন করেন এবং  বিশ্ব শিক্ষক হিসাবে তালিম দেন। যাই হোক, ১৯২৯ সালে, তাঁকে ঘিরে  বিশ্বব্যাপী একটা বিরাট  সংস্থা (দি অর্ডার অফ দা স্টার)গঠিত হয়েছিল। তিনি সেটিকে ভেঙ্গে দেন এবং বিশ্ব শিক্ষক হিসাবে তাঁর ভূমিকা পরিত্যাগ করেন। তিনি তাঁর গভীর আধ্যাত্মিক জাগরণের মধ্যে দিয়ে চুড়ান্ত ভাবে বুঝতে পারেন যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি কখনই মানবজাতিকে সত্যের পথে চালিত করতে পারে না।

তিনি বলতেন “সত্য একটি পথহীন ক্ষেত্র” – মানুষ কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, কোন ধর্ম বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে, কোন মতবাদের মধ্য দিয়ে, কোন ধর্মগুরুর অথবা আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে, কোন দার্শনিক জ্ঞানের মধ্য দিয়ে, অথবা কোন মনস্তাত্ত্বিক কৌশলের মাধ্যমে সেখানে পৌঁছতে পারেনা । একে খুঁজে পেতে গেলে, মানুষের সাথে সম্পর্কের আয়নায় নিজেকে দেখতে হবে, নিজের মনের ভিতরের ভাবগুলিকে বুঝতে হবে, লক্ষ করতে হবে, বুদ্ধিদীপ্ত বিশ্লেষণ বা অন্তর্দর্শী ব্যবচ্ছেদ দ্বারা একে বোঝা যাবেনা।

কৃষ্ণমূর্তি  বাকী জীবনভর যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন তা কিন্তু একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে নয় বরং সেই রকম একজন মানুষ হিসাবে যিনি যাবতীয় স্বতঃসিদ্ধ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করছেন, সেইগুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং তাঁর শ্রোতৃবৃন্দকে একই কাজ করতে আহ্বান জানাচ্ছেন। জীবনের মৌলিক সমস্যাগুলিকে খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে ‘একত্রে চিন্তাভাবনা’ এবং ‘কথালাপ’-এর গুরুত্বের উপর জোর দিতেন।

কৃষ্ণমূর্তির কাজের ব্যাপ্তি ছিল বিশাল। সারা বিশ্ব জুড়ে তাঁর নিরবিচ্ছিন্ন উপস্থিতি ছিল কমবেশী ৬০ বছর ধরে।

সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তাঁর রচনাবলীকে অবিকৃতভাবে এবং কোনওভাবে ব্যাখ্যা না করে পৌঁছনর দায়িত্বভার তিনি কৃষ্ণমূর্তি ফাউণ্ডেশনগুলির উপর ন্যস্ত করেন। তাঁর ভাষণ ও কথালাপগুলিকে একত্রিত করে প্রচুর বই প্রকাশিত হয়েছে এবং সেগুলিকে অনুবাদও করা হয়েছে।

ফাউণ্ডেশনগুলির ভূমিকা সম্বন্ধে কৃষ্ণমূর্তির নিজস্ব বক্তব্য ছিল এই যে “এরা যাবতীয় শিক্ষামালার পূর্ণতা বজায় রাখবে, কোনওভাবেই সেগুলির বিকৃতি ঘটাবে না বা দূষণ ঘটাবে না। ফাউণ্ডেশনগুলির কাজকর্মের মধ্যে কোনও উপদলীয় মনোভাব থাকবে না”।

তাদের এই কাজের মধ্যে কোনওভাবেই যেন সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান না ঘটে, তাদের শিক্ষা কোনওভাবেই যেন কোন ব্যক্তি এবং শিক্ষামালাকে ঘিরে কোনও ধরনের উপাসনালয়   তৈরী করতে না পারে।